
হাবিব আমজাদ, নওগাঁ,প্রতিনিধি:
নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর বাজারে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক ঘটনা। মাত্র নবম শ্রেণির এক কিশোরী তার বাবার দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম নূসরাত। সে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নূসরাতের বাবা তার প্রথম স্ত্রী—অর্থাৎ নূসরাতের মাকে তালাক দিয়ে কিছুদিন আগে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। এরপর থেকেই পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছিল। নূসরাত বিষয়টি মেনে নিতে পারছিল না। মায়ের প্রতি ভালোবাসা, বাবার অবহেলা এবং নতুন সৎ মায়ের আগমনে তার মনে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা জন্মায়। নূসরাত তার বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গে মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর বাজারে সালাম ডাক্তারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তবে অভিমান ও মানসিক যন্ত্রণার একপর্যায়ে সে আজ শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে সে একটি চিঠি লিখে রেখে যায়, যেখানে সে তার অভিমান, কষ্ট ও পারিবারিক ভাঙনের কথা উল্লেখ করেছে। চিঠিতে সে বাবা ও সৎ মায়ের প্রতি অভিযোগও জানায়।
চিঠিতে নূসরাত লিখেছে—
“আমার মা নেই, কিন্তু মা বেঁচে আছে। তাকে কেনো ফেলে দিলে? আমি তোমার মেয়ে, তবুও কেনো আমাকে একা করে দিলে? আমি আর থাকতে পারছি না। আমি চলে যাচ্ছি।”
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা জানান, নূসরাত শান্ত ও মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত না। তার এমন অকাল মৃত্যুতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন সবাই হতবাক।
এদিকে ঘটনার পরপরই নূসরাতের বাবা ও সৎ মা পলাতক রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও অভিভাবকরা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য পরিবারের প্রতি সচেতনতা ও মানসিক সহায়তা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।